বেক্সিমকোর অস্তিত্বহীন ১৬ প্রতিষ্ঠানের নামে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ

- আপডেট সময়ঃ ০৮:১৯:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫
- / ২১ বার পড়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের তিন উপদেষ্টা
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে মোট ৩২টি ফ্যাক্টরির মধ্যে ১৬টির কোনো অস্তিত্ব নেই। এই ১৬ কোম্পানির বিপরীতে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এবং বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির আহ্বায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, গত ২১ জানুয়ারি বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কর্মচারী ও শ্রমিকরা গাজীপুরের শ্রীপুর মায়ানগর মাঠে জমায়েত হয়ে লে-অফ প্রত্যাহার করে ফ্যাক্টরিসমূহ খুলে দেওয়ার দাবি জানান। তারা ঘোষণা দেন, ২২ জানুয়ারি বিকেল ৩টার মধ্যে ফ্যাক্টরি খুলে না দিলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধসহ শাটডাউন কর্মসূচি গ্রহণ করবেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বলেন, বেক্সিমকোর কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিক ও দেশবাসীর অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে মোট ৩২টি ফ্যাক্টরির মধ্যে ১৬টির কোনো অস্তিত্ব নেই, কিন্তু এই ১৬ কোম্পানির বিপরীতে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। ১২টি ফ্যাক্টরি ম্যানেজমেন্ট কর্তৃক লে-অফ করা হয়েছে, যা সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নয়।
তিনি আরও বলেন, তিনটি ফ্যাক্টরি বর্তমানে চলমান। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে অবস্থিত ৩২টি ফ্যাক্টরির বিপরীতে ২৯ হাজার ৯২৫ কোটি টাকাসহ বেক্সিমকো লিমিটেডের মোট ব্যাংক ঋণ বর্তমানে ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে শুধু জনতা ব্যাংকের পাওনা ২৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, সরকার গত ২৪ নভেম্বর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে পারিপার্শ্বিক শিল্প স্থাপনাদি ও জনজীবনে সৃষ্ট অভিঘাত পর্যালোচনা ও তৎপ্রেক্ষিতে করণীয় কার্যব্যবস্থার সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে ১১ সদস্য বিশিষ্ট ‘বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করে।
ইতোমধ্যে এই কমিটির পাঁচটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক জনতা ব্যাংক থেকে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিক-কর্মচারীদের তিন মাসের বকেয়া বেতন দেওয়া হয়েছে। যার পরিমাণ সেপ্টেম্বরে ৫৫ কোটি টাকা, নভেম্বরে ৫৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, ডিসেম্বরে ৪৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের বেতন উপদেষ্টা পরিষদের পরবর্তী সিদ্ধান্তের আলোকে প্রদানের প্রস্তুতি রয়েছে- বলেন শ্রম উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অর্থ বিভাগ থেকে ৫০ কোটি টাকা এবং সরকারের কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে ১০ কোটি টাকা সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত সরকার মোট ২২৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা দিয়েছে। অত্যধিক ঋণগ্রস্ত অবস্থায় ফ্যাক্টরিগুলো চালানোর জন্য কোনো ব্যাংকই তাদের নতুন ঋণ দিতে পারছে না।
উপদেষ্টা বলেন, দেশের মালিক জনগণ এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পরিপূর্ণভাবে জনগণের স্বার্থ রক্ষায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। এই সরকার সমষ্টিগতভাবে জনগণের স্বার্থকেই অগ্রগণ্য বলে বিবেচনা করে।
তিনি বলেন, হাইকোর্ট বিভাগে চলমান রিট মামলায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্যানেল আইনজীবী পরিবর্তন করা হয়েছে এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আলোচনা করে একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিক্রয়/লিজ/হস্তান্তরের লক্ষ্যে কোম্পানিগুলোর সম্পদ বিবরণী, দায়-দেনা, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে মর্টগেজকৃত সম্পদের বিবরণী, চলমান ব্যবসা ও আয় সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদনের সাথে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী কোম্পানিগুলোর সম্পদ বিক্রয়/ হস্তান্তর/ লিজ প্রদান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২৬ জানুয়ারি বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর চলমান আর্থিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এবং ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি সভা আয়োজন করা হয়েছে। ২৮ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির পরবর্তী সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় সর্বশেষ অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং দায়-দেনা ও সম্পদের বিবরণ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।তিনি বলেন, সরকার শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধে সর্বদা সজাগ এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে উপদেষ্টা কমিটি সর্বোচ্চ সোচ্চার রয়েছে। সরকার লে-অফ হওয়া কর্মচারী ও শ্রমিকদের বাস্তবতা উপলব্ধি করে ধৈর্যের পরিচয় দিতে আহ্বান জানাচ্ছে এবং দেশের স্বার্থে ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছে।