সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি বাড়লেও বন্যার আশঙ্কা নেই: পানি উন্নয়ন বোর্ড

- আপডেট সময়ঃ ১১:৪০:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
- / ৬৮ বার পড়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতের কারণে হাওর ও নদ-নদীতে স্বাভাবিকভাবে পানি বাড়তে শুরু করেছে। সুরমা ও কুশিয়ারাসহ বেশ কয়েকটি নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে, তবে এখনো তা বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। ফলে বর্তমানে বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভ্রান্তিকর তথ্য এবং পূর্ববর্তী বছরের অভিজ্ঞতায় সুনামগঞ্জের নদীতীরবর্তী ও হাওরাঞ্চলের অনেক মানুষ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের কৃষক ফরিদ আলী জানান, “হাওরে ধান কাটা শেষ। এখন পানি এলে সমস্যা নেই। কিন্তু যদি বন্যা হয়, তাহলে কষ্ট বাড়বে। ঘরে ধান তুলেছি, ঘরও মেরামত দরকার ছিল, কিন্তু বৃষ্টির কারণে কিছুই করতে পারছি না। এখন পানির খবর শুনলেই ভয় লাগে।”
সুরমা নদীর তীরে থাকা বড়পাড়ার গৃহবধূ সুরেজান বিবি বলেন, “আমার ঘর নদীর একদম পাশে। প্রতিবছর বন্যা হলে পানি ঢুকে পড়ে। পানি বাড়ছে দেখে এখন থেকেই দুশ্চিন্তা হচ্ছে। বৃষ্টির তীব্রতা দেখে রাতে ঘুম আসে না।”
অন্যদিকে, অনেকে এই পানিকে হাওরের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন। শান্তিগঞ্জ উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামের মৎস্যজীবী মুসা মিয়া বলেন, “বর্ষায় যখন ধীরে ধীরে পানি বাড়ে, তখন আমরা মাছ ধরার জাল, ফাঁদ তৈরি করি। এই সময়টায় মাছ বিক্রি করেই সংসার চলে। এখন হাওরে দেশি মাছ যেমন কৈ, শিং, টেংরা ও চিংড়ি ওঠে, যেগুলো ভালো দামে বিক্রি হয়। তাই আমরা চাই পানি আসুক, তবে যেন তা বন্যা না হয়।”
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ গ্রামের বাসিন্দা ইদ্রিস মিয়া জানান, “ফেসবুকে অনেকে পানি নিয়ে অতিরঞ্জিত তথ্য দিচ্ছে। হাওরে ধীরে ধীরে পানি ঢুকছে, কিন্তু এখনো তা স্বাভাবিক মাত্রায় রয়েছে। এই পানিতে আমরা মাছ ধরতে পারি, জীবিকা চলে।”
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, “ভারতের চেরাপুঞ্জি ও সুনামগঞ্জে যেভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তা বর্ষাকালের স্বাভাবিক চিত্র। এতে নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু তা বিপৎসীমার নিচেই রয়েছে। হাওরে এখনো অনেক পানি ধারণের সক্ষমতা আছে এবং সম্পূর্ণ পরিপূর্ণ হতে আরও ১০–১২ দিন সময় লাগবে।”
তিনি আরও জানান, “আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী তিন দিনের মধ্যে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা নেই। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অনেক তথ্য ভিত্তিহীন। আমরা নিয়মিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং প্রয়োজন হলে আগেই সতর্কবার্তা দেওয়া হবে।”